ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ পুরো এক বছর পিছিয়েছে । তারপরও কমেনি করোনা মহামারির দাপট। এই করোনা মহামারীর মধ্যেই আজ পর্দা উঠছে ইউরোর ষোড়শ আসরের। হিম-শীতল আবহাওয়ার মাঝে ইউরোপিয়ানদের কাছে জুন-জুলাই মাসটি আনন্দবার্তা নিয়ে আসে। ইউরোপিয়ানদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল শুরু হচ্ছে উৎসবের মাসে। তবে এর উৎসব ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ইউরোপে। ইউরোয় খেলছে ২৪ দেশ। এই প্রথমবার ইউরোয় নেই নির্দিষ্ট আয়োজক। ভিন্ন ১১ ভেন্যুতে প্রথমবার বসছে এই আসর। বিশ্বকাপের পর ফুটবলের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই আসরের উত্তাপ বিশ্বজুড়েই । তাই উৎসবের মাত্রা আরো ছড়িয়ে পড়ার কথা। কিন্তু তাতে বাধ সেধেছে করোনা মহামারি। স্টেডিয়ামের বাইরে ইউরো চলাকালীন বড় পর্দায় খেলা দেখার আয়োজন নেই। জনসমাগম ঠেকাতে পাব এবং বার গুলতে জারি হয়েছে নানা-বিধিনিষেধ। উয়েফা স্টেডিয়ামে দর্শকদের উৎসবেও লাগাম টেনে দেয়ার ‘ব্যবস্থা’ করে রেখেছে । শুধু মাত্র হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে ভরা গ্যালারিতে হবে ইউরোর ম্যাচ। বাকি স্টেডিয়ামে কোনটায় অর্ধেক, আবার কোন স্টেডিয়ামে ধারণক্ষমতার মাত্র ২২ শতাংশ দর্শকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে সেমিফাইনাল ও ফাইনালের ভেন্যুতে গ্রুপপর্বের তিন ম্যাচ ও শেষ ষোলোর ম্যাচে মাত্র ২৫ শতাংশ টিকিট বিক্রি করা হবে। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে উপস্থিত থাকতে পারবেন মাত্র ৫০ শতাংশ দর্শক।
উদ্বোধনী
ম্যাচে
লড়বে
ইতালি-তুরস্ক। আনন্দে কিছুটা ভাটা পড়লেও মাঠের ফুটবলে লড়াইটা হবে রোমাঞ্চকর। রোমের
অলিম্পিক
স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় ১১টায় ইউরোর ঘণ্টা বাজবে । বিশ্বকাপের ফাইনাল ১৯৬৮ ও ১৯৮০ ইউরো এবং ১৯৯০ হয়েছিল এই মাঠে। ১৯৬৮’র চ্যাম্পিয়নরা ঘরের
মাঠ
থেকে
ইউরো
মিশন
শুরু
করবে।
একক
আয়োজক
না
থাকায়
এবার ফেভারিট
নয়
কেউ। রেকর্ড অবশ্য বলছে গত ৩৬ বছর ধরে স্বাগতিক দল শিরোপা জিততে পারেনি। রোমাঞ্চ
নিয়ে
অপেক্ষা
করছে
৫১
ম্যাচের
ইউরো। ফ্রান্স, পর্তুগাল, স্পেন, জার্মানি, ইতালি ফেভারিটের তালিকায় উপরের দিকে । নতুন
কিছুর
আভাস
দেয়া
ইংল্যান্ড ও
সোনালী
প্রজন্মের
বেলজিয়ামও
রয়েছে
শিরোপাপ্রত্যাশী হিসেবে। ফ্রান্স বিশ্বকাপ
জেতা
বেশিরভাগ
সদস্য
নিয়েই
ইউরোর
মিশনে
নামবে ।
কোচেরও নেই কোন পরিবর্তন । খেলোয়াড় হিসেবে দিদিয়ের দেশম ফ্রান্সকে ইউরো জিতিয়েছেন। খেলোয়াড় ও কোচ দুই ভূমিকায় জিতেছেন বিশ্বকাপ। ইউরো জিততে প্রায় ছয়বছর পর ফিরিয়েছেন অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার করিম বেনজেমাকে। পল পগবা,এনগোলো কন্তে, এমবাপে, গ্রিজম্যানরা তো রয়েছেনই। গতবারের বিশ্বকাপ জেতা গোলরক্ষক হুগো লরিসের হাতে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড।
গতবারের শিরোপাধারী পর্তুগাল এবারো ফেভারিট। ক্রিস্টিয়ানো
রোনালদো পর্তুগালের
হয়ে
শেষবারের
মতো
নামছেন
ইউরোয়
। শেষ মৌসুমে জুভেন্টাসের জার্সিতে রোনালদো করেছেন ২৯ গোল। অভিজ্ঞ
বের্নার্দো
সিলভা,
ডিফেন্ডার
পেপে,রুবেন
দিয়াজ,
ব্রুনো
ফার্নান্দেজ,
জোয়াও
ফেলিক্স,
ডিয়েগো
জোতাদের
নিয়ে
গড়া
পর্তুগালের
স্কোয়াড
গত
আসরের
চেয়েও
শক্তিশালী।
এদিকে
সফল
কোচ
লুইস
এনরিকের
হাত
ধরে
বড়
মঞ্চে
ঘুরে
দাঁড়ানোর
মিশনে
নামবে
স্পেন। জাভি,ইনিয়েস্তা
, ক্যাসিয়াস,পুয়োলদের
সোনালী
প্রজন্ম
স্প্যানিশদের
এনে
দিয়েছে
দুটি
ইউরো
ও একটি
বিশ্বকাপ। তবে গত আট বছর সাফল্য নেই তাদের। অভিজ্ঞ
সার্জিও
রামোস এবারের
দলে
নেই
। ফেরান
তোরেস,
আলভারো
মোরাতা,
কোকে,
এরিক
গার্সিয়াদের
নিতে
হবে
বাড়তি
দায়িত্ব। অভিজ্ঞ জর্ডি আলবা, সার্জিও বুস্কেটসদের
সঙ্গে রয়েছেন বার্সেলোনার টিনএজ তারকা পেদ্রি। গোলপোস্টে
সামলানোর দায়িত্ব থাকবে ডেভিড ডি গিয়ার হাতে
।
১৪ বছরের প্রধান কোচের চেয়ারে সফলতার সঙ্গে ব্যর্থতার গল্পও কম নেই লোয়ের । শেষ দুই ইউরোয় সেমিফাইনাল এবং রানার্সআপ। জার্মানির ২০০৬ ও ২০১০ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলা । ২০১৪ সালে ব্রাজিল থেকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে ফেরা। জার্মানি রাশিয়ায় ২০১৮ বিশ্বকাপে বিদায় নেয় গ্রুপপর্বেই। মাত্র ১ জয়ে হতাশাজনক বিদায়ের পরও লো থেকে গেছেন প্রধান কোচের চেয়ারেই। কাই হাভার্টজ, টনি ক্রুস, টিমো ভেরনার, লেরয় সানে, ম্যাট হামেলস, ইলকাই গিন্দোয়ান, জশুয়া কিমিখদের সঙ্গে রয়েছেন অভিজ্ঞ মানুয়াল নয়্যার ও থমাস মুলার । জোয়াকিম লো ২৪ বছরের শিরোপাখরা ঘোচানোর মতো দল নিয়েই জার্মানির কোচ হিসেবে শেষ ইউরো মিশনে নামবেন ।
চারবারের
বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালি । ইতালিয়ানরা ইউরোয় মাত্র একবারই শিরোপা জিতেছে । প্রথম
ও একমাত্র
শিরোপা
১৯৬৮
সালে
জয়ের
পর
আরো
দুইবার
ফাইনালে
উঠলেও
চ্যাম্পিয়নের
স্বাদ
পাওয়া
হয়নি। ম্যানচেস্টার সিটি ও ইন্টার মিলানের সফল কোচ রবার্তো মানচিনি প্রথমবার ইতালিকে নিয়ে আসছের বড় মঞ্চে। ইতালি ২০১৮ বিশ্বকাপের টিকিট পেতে ব্যর্থ হয় এরপরই দায়িত্ব পান মানচিনি। দারুণ
একটা
দল
গড়ে
তুলেছেন
তিনি গত
তিন
বছরে
। বড়
কোনো
তারকা
নেই। কিন্তু দলীয় সমন্বয়ে দারুণ এক দল ইতালি। দলে আছেন চেলসির হয়ে চ্যাম্পিয়নস লীগ জেতা মিডফিল্ডার জর্জিনহো, জুভেন্টাসের ফেদেরিকো চিয়েসা পিএসজির মার্কো ভেরত্তি । আক্রমণভাগে
লরেঞ্জা
ইনসিনিয়েদ ও চিরো ইম্মোবিলের সঙ্গে রয়েছেন অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার জর্জিও কিয়েল্লিনি।
এবারের
ইউরোর
‘বাজির
ঘোড়া’
সোনালী
প্রজন্মের
বেলজিয়াম
। থিবো কোর্তোয়া, এডেন
হ্যাজার্ড,
কেভিন
ডি
ব্রুইনা,
রোমেলু
লুকাকু। রক্ষণভাগে অভিজ্ঞ জান
ভেরটঙ্ঘেন,
টবে
আলডারউইয়ারল্ড
ও বরুশিয়া
ডর্টমুন্ড
তারকা
থমাস
মিউনিয়ার। সব পজিশনেই ম্যাচ জেতানো তারকায় ঠাসা স্কোয়াড। শেষ
বিশ্বকাপে
সেমিফাইনাল
খেলা
দলটাই
ইউরোয়
আসছে
নতুন
চমক
দেখাতে।
চমক
দেখাতে
পারে নেদারল্যান্ডসও । ম্যাথিয়াস ডি লিখট, ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং, মেমফিস ডিপাই, জর্জিনিয়ো ভাইনালডামদের নিয়ে গড়া ডাচরা এবারের আসরের আন্ডারডগ। তরুণ
তারকাদের
নিয়ে
কমলাঝড়
তুলতে প্রস্তুত টোটাল ফুটবলের দেশটি ।
শেষ
বিশ্বকাপের
সেমিফাইনালেও
উঠেছিলেন
হ্যারি
কেইনরা। সেমি ও ফাইনাল লন্ডনে হওয়ায় সম্ভাবনায় এগিয়ে ইংল্যান্ড। ইংলিশরা গ্রুপপর্বের
তিন
ম্যাচও
ঘরের
মাঠে
খেলবে ।
মার্কাস
রাশফোর্ড,
হ্যারি
কেইন,
জর্ডান
হেন্ডারসনরা
কি
পারবেন
ইংল্যান্ডকে
প্রথম
ইউরোর
স্বাদ
এনে
দিতে ?
নাকি
ফেভারিটদের
ছাপিয়ে
সুইডেন,ক্রোয়েশিয়া
কিংবা
ডেনমার্কের
মতো
কোনো
দল
লিখে
ফেলবে
আরেকটি
ইতিহাস ।
এই সব
প্রশ্নের উত্তর
পেতে অপেক্ষা করতে হবে মাত্র ১ মাস ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
If you have any doubts,Please let me know.