লিওনেল মেসি মনে করেন বার্সেলোনার বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছেন তিনি ।
বার্সেলোনার বর্তমান সভাপতি জুয়ান লাপোর্তা নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর আগে থেকে বলে আসছিলেন,লিওনেল মেসিকে ক্লাবে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন তিনি । তিনি আরও বলেছিলেন,আমিই একমাত্র লোক যে এই কাজ সফলভাবে করতে পারব ।
তবে লাপোর্তা সভাপতি হওয়ার পর ক্লাবের ঋণের পরিমাণ জেনে অবাক হয়েছিলেন । তার ধারণা ছিল ক্লাবের ২০০ মিলিয়ন ইউরোর মতো ঋণ হতে পারে,কিন্তু আসলে বার্সার ঋণ ছিল ৫০০ মিলিয়ন ইউরো ।
দেড় মাস আগে লাপোর্তা ও মেসি একসঙ্গে ডিনারে গিয়েছিলেন । সেই ডিনারে লাপোর্তা একটা ধারণা পান যে,মেসিকে কীভাবে বার্সেলোনায় ধরে রাখা যায় ।
বার্সেলোনায় মেসিকে ধরে রাখতে দুটি আলাদা চুক্তিপত্র তৈরি করান লাপোর্তা । একটি দুই বছরের,আর দ্বিতীয়টি পাঁচ বছরের । তবে মেসি ও লাপোর্তা দুই পক্ষই পাঁচ বছরের চুক্তির বিষয়ে একমত হয় । বার্সা মনে করেছিলো লা লিগা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিতভাবে এ চুক্তি অনুমোদন দেবে ।
কিন্তু লা লিগার প্রধান হাভিয়ের তেবাসের সঙ্গে দেখা করেন লাপোর্তা ওই ডিনারের দুই-তিন দিন পরই । তেবাস লাপোর্তাকে বলেন , মেসির সঙ্গে বার্সার চুক্তিকে তারা অনুমোদন দিতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে সিভিসি নামের একটা প্রাইভেট ইক্যুইটি প্রজেক্টে সাহায্য লাগতে পারে ।
ওই সিভিসি সম্প্রতি একটা চুক্তির বিষয়ে সম্মত হয়েছে,যার আওতায় তারা ২৭০ কোটি ইউরো বিনিয়োগ করবে লা লিগায় । বিনিময়ে তারা নেবে এর ১০ শতাংশ আর বিনিয়োগ করা বাকি অর্থের ৯০ শতাংশ পাবে ক্লাবগুলো ।
কিন্তু সমস্যা হল,যখন বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ এই সম্ভাব্য চুক্তির বিরুদ্ধে মত দেয় । এই চুক্তিতে একমত হলে সেখান থেকে অনেক অর্থ আসতো এবং ১৫ শতাংশ যা প্রায় ৪০ মিলিয়ন ইউরো খেলোয়াড়দের বেতন পরিশোধ করা যেত ।
লাপোর্তা আগে থেকেই জানতেন এই চুক্তিতে সই করলেই লিওনেল মেসিকে বার্সেলোনায় ধরে রাখা সম্ভব । এজন্য তেবাসের কাছে তিনি তার আগ্রহের কথাও প্রকাশ করেছিলেন । কিন্তু বার্সেলোনার নতুন নির্বাহী প্রধান ফেরান রেভারটারের সঙ্গে লাপোর্তা একমত হন যে,এটা ক্লাবের স্বার্থের জন্য খুব ভালো কিছু হবে না ।
এরপর লাপোর্তাকে রেভারটার কিছু সংখ্যা দিয়ে এক কথায় চমকে দেন, যা শুনে নতুন লাপোর্তার মেজাজ খারাপ হয়ে যায় । খেলোয়াড়দের বেতন এবং মেসির বেতনসহ দাঁড়ায় ক্লাবের মোট আয়ের ১১০ শতাংশ,তবে মেসির বেতন ছাড়া সেটা হয় ৯৫ শতাংশ । তখনি মেসিকে বার্সেলোনায় রাখার বিষয়টি প্রায় অসম্ভব হয়ে যায় ।
লাপোর্তা স্বীকার করেছেন যে, মঙ্গলবারই তিনি ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন মেসির সঙ্গে নতুন চুক্তি না করার । এর দুই দিন পর মেসিকে বিষয়টি জানিয়ে দেন ।
লাপোর্তা অবশ্য মেসির সঙ্গে চুক্তি না হওয়ার জন্য লা লিগার আইনকানুনের কঠোরতাকে দায়ী করেছেন । সেই সঙ্গে তিনি সিভিসির প্রস্তাবিত বিনিয়োগ পরিকল্পনাটি বার্সেলোনার স্বার্থের জন্য ভাল ছিল না বলে জানান ।
তবে আরেকটি সূত্রে জানা যায়,লিওনেল মেসিকে ক্লাবে রাখার জন্য বার্সেলোনা আসলে তেমন কোনো চেষ্টাই করেনি ।
বার্সেলোনার সাবেক পরিচালক জেমি লোপিসের কথায় সেটা আরও স্পষ্ট হয় । পদত্যাগের পর তিনি জানিয়েছেন, স্বাধীনভাবে কথা বলতে না পারায় আমি পদত্যাগ করেছি । আর মেসি বলেছে তারা যা যা করতে পারত তার চেষ্টা তারা করেনি ।
মেসির বার্সেলোনা ছাড়ার ঘোষণার দিনে লাপোর্তাকে বার্সেলোনা শহরের সেরা এক রেস্তোরাঁয় জুভেন্টাসের আন্দ্রেয়া অ্যাগনেলির আর রিয়াল মাদ্রিদের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের সঙ্গে দেখা যায় ।
লোপিস আরও বলেছেন, লিওনেল মেসি যখন বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে চলে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন ঠিক তখনই লাপোর্তা কেন রিয়াল মাদ্রিদের সভাপতির সঙ্গে খাবারে ব্যস্ত ।
বার্সেলোনার আর্থিক অবস্থা খারাপ সেটা ঠিক আছে । কিন্তু মেসি ছুটি থেকে ফিরে জানতে পারেন তার শুধু সইটাই করা বাকি আছে ক্লাব ছেড়ে চলে যেতে । আর এ কারণেই মেসি বেশি কষ্ট পান । তিনি এটা অনুভব করেন,যে ক্লাবকে এত কিছু দিলেন, সেই ক্লাবই তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলো । বার্সেলোনা মেসিকে আগের বেতনের চেয়ে ৫০ শতাংশ কম নেয়ার যে প্রস্তাব করেছিল, সেটাও মেসি গ্রহণ করেছিলেন । এমনকি কোন ধরনের দর কষাকষি পর্যন্ত করেননি ।
সূত্র:বিবিসি
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
If you have any doubts,Please let me know.